Try to Live till Live the World
  প্রিয় প্রজন্ম!
 
১.
হয়ত বুঝিনি আমিই

প্রিয় প্রজন্ম,
তোদের পৃথিবীতে আর ভালবাসা দিবস। হলেও সে তোকে দিতে পারলাম না; যে ভালবাসাকে আমি চিনেছি, আজ অবধি দেখে এসেছি তা তোদের ভুবনে অচল সিকি।

কি জানি, হয়তবা আমিই বুঝিনি- ভালবাসা কি? কেমন হয়? কতখানি দিতে হয় কিংবা নিতে হয়,,,,,,,,,,,,।

তোরই-
"ফএমু"

২.
মমনে সরলী শিখা জ্বলে নিশিদিন

-ফজলে এলাহি মুজাহিদ

প্রিয় প্রজন্ম,
ফসলের অপেক্ষায় অগ্রানের চাষার মত, কালবৈশাখীর অপেক্ষায় চৈতী আমের মুকুলের মত, আষাঢ়ে জলের অপেক্ষায় পানসী আর সাম্পানের মত আমাদের প্রবাসীদের অন্তরাত্মাগুলোও অপেক্ষায় তিতীক্ষ থাকে বৎসরান্তের আনন্দায়োজন শিক্ষা সফর অথবা পিকনিকের। দিনময় উৎসব-আনন্দের ঢেউগুলো যেন তরঙ্গে রূপ নেয় তখন, যখন আসর আসি আসি করে। কেননা, আসরের সালাতের পরই শুরু হতে যাচ্ছে 'তারান্নুম'-এর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যোগ্যতার বন্টনে হোক আর অর্পিত দায়িত্ব পালনে হোক; সাংস্কৃতির সাথে থাকাটাই এযাবৎ দেখে এলাম অনিবার্য। গল্প-কথার কোলাহলে প্রস্তুত করছিলাম নাটকের মঞ্চ, সুতো বাঁধো, পর্দা টানাও, পরিবেশ বানাও ইত্যাদি কর্মে যখন বিভোর, তখন কোন রকমে হাঁটতে পারা একটি বাবু দূর থেকে আমার উদ্দেশ্যে অনেকগুলো মানুষের ফাঁকফোঁকর পাড়ি দিয়ে, হামাগুড়িতে ষ্টেজে উঠে পায়ে পায়ে আমাকে দেখতে দেখতে এগিয়ে আসছে আমার দিকেই; ভাবলাম হয়তো তার বাবা এদিকেই কোথাও বসে আছেন। তখনো আমি ষ্টেজের অপর প্রান্তের নীচে, আদুরে বাবুটি আসছেই আসছে, এ প্রান্তে এসে যাওয়ায় দূর থেকে তার বাবার কথায় আবারো ফিরে দেখি আর কোলে তুলে নেই। সে তখন আমাকে কত কথা বলায় ব্যস্ত। সে পিকনিকে মনে হয় আন্তরিকতায় এর চেয়ে বড় কোন পাওয়া আমার ছিল না। খুশীতে মনটা ভরে উঠলো, সে নিষ্পাপ শিশুটিকে আমি কখনো দেখিনি, চিনি না, পৃথিবীতে এই-ই তাকে আমার প্রথম দেখা, অথচ এত মানুষ থাকতে সে আমাকেই তার অবুঝ মনের আব্দারগুলো, কে তাকে চিমটি দিয়েছে, কে তার খেলার পুতুলটা নিয়ে গেছে, শব্দ সাজিয়ে বলতে না পারা কথাগুলো অজানা অনেক শব্দে আর আকার ইঙ্গিতে বলার জন্য আমাকেই বেছে নিয়েছে; 'আসলে একটা নিষ্পাপ শিশুমন আমার মত পাপক্লিষ্ট অন্তরধারক একজনকে তার বন্ধু ভাবতে পেরেছে'-এ আনন্দটাই আমার বিরাট পাওনা। অগনন সিজদায় অবনত আমি প্রতিপালকের সমীপে তাই।

প্রজন্ম, তুই একমত হবি কি হবি না জানি না, তবে আমি মনে করি জগতের কেউই এমন কাউকে তার বন্ধু বানাতে চায় না, যার সাথে তার দৃষ্টিভঙ্গির অমিল, মনের অমিল, আচরণের অমিল এমনকি বয়সের অমিলও বন্ধুত্বের পথে একটা অন্তরায়; যদিও বিরল নয়। কথায় বলে- 'শিশুরা সরল মনা', থাকে হয়ত, তবে শিশুদের মাঝে আমি এর বাইরেও আরেকটা ব্যাপার দেখে থাকি, তা হলো শিশুদের নিষ্পাপতা, আমি যেন এই পবিত্রতার ঔজ্জ্বল্য উপলব্ধি করতে পারি। তাদেরে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ব্যবধানটা বুঝার চেষ্টা করি, একটি শিশু মন আর ঊনত্রিশোধর্্ব আরেকটি মনের মধ্যকার সমূহ ব্যবধান। আমি স্পষ্ট দেখতে পাই যেন, যেন অনুভবের নড়াচড়া শুনতে পাই; দু'টো আত্মার ঔজ্জ্বল্যতা আর মলিনতা। ভাবি, একদিন আমিও তো এমন ছিলাম; আজ কোথায় এসে দাঁড়ালাম?? এক পক্ষীয় প্রিয় স্কুল বন্ধুটি একদা চিঠির ভাষায় বলেছিল- '(তোর) আগের সেই নিটল দু'টি মায়াময় চোখ আর দেখতে পাই না; সেখানে এসে ভর করেছে যেন স্বার্থ, ঘৃণা ইত্যাদি'। পত্রলেখক বন্ধু কখনোই ভাবেনি, জানেও না যে, তার এইটুকু কথা আমাকে কতটা ভাবিয়েছে; যা আজো ভুলতে পারিনি। জীবনের কাছ থেকে কতটা অর্জিলাম, আর কি কি হারালাম; তার হিসেবে দু'চোখের বাতি নিভে যেতে চায়, ভয়াবহ এক লোডশোডিং-এ নিমজ্জিত হই।

অংককে ভালবাসতাম, যদিও তা ছিল বীজ ও উচ্চতরে, কিন্তু অর্থাভাবে বিজ্ঞানের সাথে যে আড়ি দিয়েছিলাম একদা তার মীমাংসা আজো হলো না; আর হবে বলেও মনে হয় না। হিসেবীই হয়ে পড়লাম বাস্তব অভিজ্ঞতায়। হিসেবী কি প্যাঁচানো মানুষ হয় কি না তা খুঁজে দেখিনি, তবে মনটাকে আমি খুঁজে পেয়েছি ঠিক অংকের মতই সরল; একটু প্যাঁচেই তাতে লেগে যায় দারুন জট, যার ফলাফল দাঁড়ায় 'ভুল'। অনেকেই তো দায়বদ্ধ আজকাল, ওদের প্রতি নানা অবসরে তাকালে দেখি অধিকাংশই আমার এই 'আন্তরিক সরল অংক'-এর ফলাফলকে সীমাহীন ভয় পায়। তাদের দুর্বলতাগুলোর জন্য আমার আফসোস হয়, সুযোগ পেলে দু'ছত্র ওয়াজ শোনাই, কেউ কেউ শোনে, কেউ একান থেকে ওকানে পাচার করে দেয়। ভাবনারা ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠে, যখন দেখি পঁ্যাচানো অন্তরসমূহের কারুকাজ আর আমাকে দেখার দৃষ্টিগুলোয় আমি আমূল বিদ্ধ হয়ে আছি বিষাক্ত তীর হয়ে, যার যন্ত্রণায় তারা ছটফট করে নিরন্তর। বন্ধু, বলতো, কি করে তাদের একথা বুঝাই যে, আমার সরল অংকে গরমিল হয়ে গেলে শুধু তুমিই ডুববে না; বরং আমাকেও সাথে নিয়ে নিমজ্জিত হবে ওপারের 'কালো রঙ আগুনের সমুদ্রে'!!! দো'আ করিস্ বন্ধু, আমার 'শিশুমন প্রিয়তা' আর 'সরল অংকগুলো' যেন বেঁচে থাকে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের জন্য শুভকামনা।
তোরই-
"ফএমু"
১২.০৪.২০০৭, মদীনা মুনওয়ারা, সৌদি আরব।

৩.
আলোক প্রান্তরের পথে পথে

-ফজলে এলাহি মুজাহিদ

প্রিয় প্রজন্ম,
'দ্বন্ধ বিহীন ছন্দময় জীবন' কি খুব সুখকর? আমার কিন্তু তা মনে হয় না। তাই একদার পরিমাপনের শিকলে বাঁধা উপার্জন প্রচেষ্টাকে নিজ হাতেই ভেঙ্গে দিলাম; হলাম উন্মুক্ত, বৈকালিক পাখিদের মত তখন ঘুরে বেড়াতাম শহরের এ প্রান্ত হতে ওপ্রান্ত পর্যন্ত; উদ্দেশ্য যে পণ্য বিক্রয় তা নিশ্চয় বুঝে ফেলেছিস। তখনকার পূর্বাপর দিনগুলোকে সাজালে মনে হত যেন জেল থেকে ছাড়া পেয়েছি।

'ছন্দ বিহীন দ্বন্ধময় জীবন'কেও আমি আশা করি না, করি না কারো জন্যই। মনে হলেই তো হৃদয়-দেয়ালে আঘাত হানে ইয়াহূদীদের বুলেট, আল-কুদসের শিশু-কিশোর-যুবকেরা যেখানে অর্ধশতাব্দীরও অধিক কাল যাবৎ চালিয়ে যাচ্ছে 'অস্ত্র-পাথরের অসম যুদ্ধ'। খৃষ্টান-পৌত্তলিকদের যৌথ আক্রমণে ভেঙ্গে পড়ছে আমার আদর্শের ডালপালা; আমার রক্ত আজ বিক্রি হচ্ছে জলের দামে। সে জীবনের স্বরূপ খুঁজতে গেলে এমনি এক বিচিত্র চিত্র দেখি দু'চোখে, দৃশ্যায়িত হয় সমগ্র অনুভবে-অন্তরজুড়ে। এই কি হতে পারে কামনার জীবন?

মধ্যমপন্থী জাতির জন্য তাই চাই মধ্যমপন্থার অবলম্বন। যে কথা আজ তোদেরে শোনাই, যে অনাকাঙ্খিত দৃশ্য দেখি তোদের দিনাতিপাতে, যে অবক্ষয় দেখি 'এক শরীরীয়' এক জাতির যুগীয় পরিবর্তনে; তার অংশ তো আমিও। কি করে দোষের সবটুকু আরোপ করি তোদের স্কন্ধে বল্? নিজেই তো নুয়ে আছি ভেঙ্গে টুকরো হওয়া দেহের জোড়াতালি কুড়িয়ে পেঁচিয়ে পথ চলতে, ছুটতে জীবনের সায়াহ্ন সীমান্তে; বেলায় বেলায় যে পৌঁছুতে হবে ওপারের বারান্দায়।

ওখানেই তো দাঁড়িয়ে আছেন আমার সবটুকুর মালিক, সর্বস্বের প্রতিপালক, সর্বোচ্চ ভালবাসা, সর্বোন্নত শ্রদ্বাঞ্জলির প্রাপক। বল্- ডানে, বাঁয়ে, ঊর্ধ্বে অথবা অন্তরীক্ষে আর কি কোথাও যাওয়ার জায়গা আছে আমাদের? জীবনের যে পন্থাকে বাঞ্ছনীয় ভেবে উপহার দিলেন তিনি; সে পদ্ধতিতে তোদেরে দেখতে চাই রে। তাই তো এক বুক আশা, এক আকাশের স্বপ্ন আর এক সাগর ভালবাসা নিয়ে তোদের জন্য লিখি আর লিখি।

যেদিন তোরা স'বে পার হ'বি আলোকিত পুলসিরাত; পঙ্কিলতার অন্ধকারে নিমজ্জিত আমার দিকে তখন একটু আলো ছুঁড়ে দিস্রে; দিবি তো?
(লিখতে গিয়ে অশ্রু সংবরণ করতে পারিনি কিছুতেই)

তোরই-
"ফএমু"

২৬.০২.২০০৭, মদীনা মুনওয়ারা, সৌদি আরব।

ছবির জন্য
কৃতজ্ঞ যেখানে।

৪.
দিব্য যেন দু'চোখ জুড়ে

-ফজলে এলাহি মুজাহিদ

প্রিয় প্রজন্ম,
ঈর্ষণীয় দিন কি চলে গেছে, না কি চলছে কিংবা আগামীতে অপেক্ষা করছে; কিছুই নির্দিষ্ট করতে পারছি না। জীবনের ধুম্রোজালে ঠিক মত কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। আগে তো খোলা চোখেই পৃথিবীকে দেখতে পেতাম; ছোট বেলায় অবশ্য অনেক কাছের গাছালী কিংবা প্রান্তরশেষের গ্রামকে দূরের মনে হত, ছোট চোখ বলেই হয়ত, তারপর বড় হওয়ার সাথে সাথে যেন দৃষ্টির আয়তনও বাড়তে লাগলো। অথচ এখন দেখতে হয় স্বল্প পাওয়ারী হলেও একটি গ্লাসের আড়াল হতে; যেন অনেকটা উঁকি মেরে। হবেই বা না কেন, একদার আগ্রহ, আকর্ষণ অথবা নিতান্তই অজানাকে জানার প্রেরণায় যে কম্পিউটারকে মন থেকে চেয়েছিলাম, কে জানতো যে সে এখন দিনের চব্বিশ ঘন্টার প্রায় পনর/ষোল ঘন্টাই গলায় ঝুলে থাকবে? কখনো তো তারো বেশী, অবশ্য ছুটির দিনগুলোতে কিছুটা নিষকৃতি মেলে। প্রজন্ম, তোদের জীবনকেও কি প্রযুক্তি এমনি দায়বদ্ধতায় নিমজ্জিত করেছে?

আমার কি মনে হয় জানিস্, স্রষ্টা যেন দৃষ্টির লেন্স বিভাজনের সময় অজস্রতা এনেছেন আর সেখান থেকে আমায় দিয়েছেন আড়ালগুলো দেখার ভাগটি; অনেকেই পেয়েছেন তেমনটি হয়ত, কিন্তু আমার দারুন পছন্দ হয়েছে এমন ধারার লেন্স; তাইতো প্রতিটি দৃষ্টিময় ভাবনাতেই আমি সপ্রশংস আন্তরিক সিজ্দা করি তাঁর সমুন্নত সকাশে। অবশ্য এমন দিব্যতেও জ্ঞানের বাইরে তেমন কিছুই দেখতে পাইনা। বুঝতে শেখার দিনগুলোতেই দারিদ্রতা আর কিছুটা দুঃখ আমাদের জড়িয়ে নিল বুকে। সচ্চলতা আর সুখের সাথে আমাদের কি আড়ি ছিল; তা আমার জানা ছিল না। জীবনের যে অংশটাকে যখনি বুঝতে শিখতাম, পৃথিবীময় যেন তারই স্বরূপ খুঁজতে শুরু করতাম, কি জানি এটাই হয়ত আমাদের মৌলিক স্বভাবের একটি, নয়ত টিপু, অপু, সুলতানা, সোহাগ ওদেরেই কেন খেলার জন্য বেছে নিলাম; অথচ বড়দের অনেকেই কত্ত আদর করত তাদের কোলে যাওয়ার জন্য।

ভুবনময় যেন খুঁজে বেড়াতাম ব্যাথার দোসর, হয়ত এ কারণেই যে, যদি জানতে পারতাম এ শুধু আমার একারই নয়; এ পথের ক্লান্ত পথিকের দল অনেক বড়, তবেই যেন ক্লান্তি মুছে যাবে, শক্তি ফিরে আসবে; যমীনকে শক্ত ভিত্তি করে আকাশের নীচে আমি দাঁড়াতে পারবো মাথা উঁচু করে। দৃষ্টির দিব্যতায় আমি স্থির তাকাতাম (এখনো তাকাই) রিকশা ওয়ালার প্রতি, হাত-পা হীন ভিক্ষুকের প্রতি, সন্তানকে একটি বিস্কিট কিনে দিতে পারায় তৃপ্ত বাবার প্রতি, একজন বিধবার প্রতি, একটি ইয়াতীমের প্রতি, সম্পদের প্রাচুর্যে এবং অকাজের প্রাবল্যে নূয়ে পড়া কারো প্রতি, সাম্যবাদের অন্ধত্বে নিমজ্জিত ক'জনের প্রতি, যুলুমের শিকার এক সস্প্রদায়ের প্রতি, যালেমের বিরুদ্ধে একদল মুজাহিদের প্রতি, আল্লাহর ভালবাসায় পৃথিবীর প্রতি নির্মোহ একজনের প্রতি; আমি হারিয়ে যেতাম, কখনো বেদনায়, কখনো ঈর্ষায়, কখনো চেতনায়।

তারপর আমি জানলাম প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথাঃ তিনি দৃষ্টিকে নীচের দিকে রাখতে বলেছেন; ঊর্ধ্বে নয়, তবেই সম্ভব অপ্রাপ্তির যন্ত্রণা থেকে নিস্কৃতি পাওয়া। অমানিশার অন্ধকার রাত্রিতে উদ্ভ্রান্ত পাঞ্জেরীর সরণদ্বীপের সন্ধান লাভের মতই জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেল আমার। না চাইতে যা পেয়েছি আর পেয়ে যাচ্ছি তা নিয়েই রীতিমত লজ্জিত, প্রশংসাকারী, অবনত; কি লাভ বলো অন্যের গাছের টসটসে পাকা আম দেখে দেখে নিজের জিভের জল অব্ধলী দেয়ায়?
প্রজন্ম, তুই ভাল আছিস্ রে? থাকিস্ অন্ততঃ, আমার জন্য।

তোরই-
"ফএমু"

৫-৬.০৩.২০০৭, মদীনা মুনওয়ারা, সৌদি আরব।

ছবির জন্য
কৃতজ্ঞ যেখানে।

৫.

হৃদয়ে বাজে না সুর.....

-ফজলে এলাহি মুজাহিদ

প্রিয় প্রজন্ম,
আর্ত দিনের দেয়াল ভাঙ্গতে গিয়ে হাতুড়ির আঘাতে আঘাতে কখন যে হৃদয়টা লৌহ প্রতীম হয়ে গেছে টেরই পাইনি; দিনরাত হাতুড়ির লোহার সাথেই সংঘর্ষ অথবা সংযোগ ঘটছিল কি না। আজ যখন কেউ ভালবাসার কথা শোনায়, তখন বড্ড মায়া হয়, কেন হয় তা বলবো না, বলি শুধু তাদের সেই মায়াময় হৃদয়টা বেঁচে থাকুক; যতদিন তারা বেঁচে থাকবে। কেউ যদি আমাকে বাঁকা হাসির বাণে কিংবা কটাক্ষে আঘাত হেনে বলেঃ তোমার মধ্যে ভালবাসাও নেই, নেই তা বুঝার, নেই কিছু দেয়ার, নেই কোন নেয়ার যোগ্যতাও। আমি তখন শুধুই চিন্তা করি, চিন্তা করি আর চিন্তাই করি; কেননা, আমার অন্তরে এসব কথার কোন প্রতিক্রিয়া খুঁজে পাই না। থমকে, দৃষ্টিকে সুদূরে হারিয়ে ভাবনায় হাবুডুবু খাই; আধুনিক মেশিনের সাথে আমার সখ্যতা প্রবল কিন্তু স্পর্শে তো খুব একটা প্রাবল্য নেই... তবে কেন নিজেকে মাঝে মাঝে যান্ত্রিক মনে হয়, কেন অনুভবে ঝড় উঠে না আর আগের মত? বরং দিনে দিনে কাষ্ঠের শুকনোতা যেন মচমচেই হয়ে চলছে, কি জানি... ক'বে যে ভেঙ্গে পড়ে বায়ুর দেয়ালের ফাঁকে টিকে থাকা মাটির চলমান এ দেহ পঞ্জির, হারিয়ে যায় কালের পর্দার আড়ালে; তোদের ভালবাসাকে ফাঁকি দিয়ে।

ভাল আছিস বন্ধু? পৃথিবীতে একথা অনেক শুনি যে, দু'টি দেহ না কি কখনো কখনো এক আত্মা হয়ে যায়; দেখিনি এখনো। আচ্ছা, এ কথা কি সত্যি? নাকি মানুষেরা নিজেদের সাথেই প্রতারণা করতে এ শব্দগুলোর ব্যবহার করে থাকে? তুই দেখেছিলি কোথাও? আমি তো এই মোট মিলিয়ে দশ হাজার আট'শ বিরাশি দিন থেকে শৈশবের অবুঝ দিনগুলো বাদ দিলে যা বাকী থাকে তাতে মেমোরি খুঁজে সাজালে দেখা যায়- কোথাও 'প্রথম দেখা'র 'থম' মুছে গেছে, 'পরিচয়'-এর 'রি' ঝাপসা হয়ে আছে, 'ভালবাসা' দু'ভাগ হয়ে 'ভাল' আর 'বাসা'তে পরিণত হয়ে গেছে, কিন্তু সে বাসাতে 'ভালবাসা'কে কোথাও দেখা যায় না। 'সংসার'এ সঙ-এর ছড়াছড়ি, ঝগড়াঝাটি, মারামারি, অবিশ্বাস, সব মিলিয়ে যেন 'সঙ'টাই 'সার' হলো; সত্যিকারের ভালবাসার সংসার হলো না। দেখেছি পূর্ব পুরুষে, হালের চারদেয়ালে, কনিষ্ঠদের অগ্রগামিতায়। তৃষিত আমি তাই অনেক বিতৃষ্ণ এখন। সময়ের কি জলাতঙ্ক হয়ে গেল নাকি রে?

কখনো লিখেছিলাম- "তবুও অপেক্ষা এক অম্লান রূপসীর/বাঁশ পাতার আঁধার বিদায়ে/কাকলীকণ্ঠী বীণা বাজিয়ে/যে আমায় জাগিয়ে তুলবে জীবনের ভোরে।" মাঝে মাঝে ভাবি, এমন কবিতা কি আবার কখনো লিখতে পারবো? কি জানি, আমি কি জানি ভবিষ্যত, জানি না কোথায় জীবনের রঙধনু আর কোথায় অস্তাচল, কোথায় আয়েশী অলস বিছানা আর কোথায় শহিদী সিথান? এ কাঠের বুকে কালের পেরেকেরা যতই ঠুকোঠুকি করুক; আমি টলে উঠার পাত্র নই ইনশাআল্লাহ্, যদি কাঠ আর পেরেকের সৃজক করুণায় সিক্ত-সবল রাখেন আমার শেকড়। তোর জন্য আঁজলা ভরে প্রার্থনা পাঠালাম যেথায় পাঠাতে হয়; আমাদের জন্য 'সেই একটি' ছাড়া আর কোথাও কিছু আছে কি?
তোরই-
"ফএমু"
০৮.০৪.২০০৭, মদীনা মুনওয়ারা, সৌদি আরব।
ছবির জন্য
কৃতজ্ঞ যেখানে।

৬.

মন থেকে মনে বিনা-তারে আলাপন

প্রিয় প্রজন্ম,
দীঘল শীতল রাতের শেষ প্রহরে যখন আমি মাউসের বুতাম চাপি, মজিল্লার ক্যানভাসে চিত্রিত হয় কত নানান উপাখ্যান; আমি শুধু কীবোর্ডে ধ্বনি তুলি আর ওরা পর্দার ওপাশে; আমরা কেউ কাউকে ছুঁতে পারি না। আচ্ছা, তুই কি বলতে পারিস্, মনিটরের কাঁচের ওপাশে থাকা যন্ত্রাংশ কিংবা হৃদয়াংশগুলোর দূরত্ব কত? আমি হিসেব মেলাতে খেই খুঁজে পাই না; "এলসিডি" কত পাতল, অথচ হাজার হাজারের ব্যবধান এটুকুতেই; ঠিক যেন আমাদের অন্তরের ব্যবধান। তুই নিশ্চয়ই আমার লেখাটুকু ছুঁয়ে দেখেছিস; স্পর্শ পেয়েছিস আমার, হই না কেন লক্ষ্য যোজন এপারে। আহাঃ তুই কি বুঝিস্না যে আমিও চাই তোকে ছুঁতে; যেমন করে ছুঁয়ে আছে দুধসাদা কাপড়ের টুকরো বুকের পশমী যমীন। মন আমার উদ্ভ্রান্ত আজ সোবহে সাদিকের কোন এক প্রিয় বিদায়ী কান্নার বিষাদী সুরে। বল্ না, তুই কি টের পেয়েছিস্ তা?

বিগত চিঠিতে বলতে চেয়েছিলাম 'মনে মনে বিনা তারের আলাপন' নিয়ে; চকিত দৃষ্টি কেড়ে নিল কথা। মন্দ কি, বেশ কিছু দিন বেশ তো দিলাম নামিয়ে হৃদয়স্পন্দনে অনাকাংখিত নীরবতা। বড্ড খেয়ালী এক রাস্তার পাশে অফিস কক্ষ; যান্ত্রিক শব্দগুলো সব ষড়যন্ত্র করে জাগিয়ে দেয় নিরব করা ঘুম পাড়ানো আমার মনকে। প্রথম প্রাথমিকের কাগুজে ফুলগুলোকে ভাবনায় আনতে পারিনা একদম, বৃষ্টির গড়া উঠোন সাগরে কখনোই পারি না এ মন সিন্দাবাদের কাগুজে-জাহাজ ভাসাতে, পারি কি অষ্টম-নবমের দুয়ারের পাশে বুনা সূর্যমুখীকে দেখতে বলো? সূর্য তো এতদিনে মধ্যগগণ ছুঁই ছুঁই করছে; হায়, কি সম্ভাবনাময় পথচলা, বেঁচে থাকা, উদাসী হাওয়ায় মনের কথাগুলো ছড়িয়ে দেয়া আমাদের। বলতে পারিস্, ওকে, তোকে অথবা তাকে যদি আমি এখন সর্বশক্তি দিয়ে ভাবি; সেও আমায় ভাববে এখন, আমার বিনা তারের ঠুক ঠুক অথবা ধক্ ধক্ কিংবা হৃদয়স্পন্দন কি সে টের পাবে? তুই পাস? তিনি পাবেন? কিংবা তোমরা?

কাল গুনি হাতের চার চারটি কর-এ কর-এ, কখনোই তো বিশ-এর অধিক গুনতে পারি না; লোকে বলে দেড় খানা ইট দিয়ে না কি ইমারত রচিত হয় না, আমি কি তবে ফুরিয়ে গিয়ে তা প্রমাণ করবো অথবা আমাকেই হতে হবে ইতিহাস? কি আশ্চর্য ঘড়ি ঝুলে আছে হাতের কব্জায়, বন্ধ হলে অথবা করলে পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন, জগতে অচল, অ-মূল্য, নিংড়ানো আবর্জনা; চলতে হলে জগতের নিয়মেই ফিরে আসতে হবে। তাই কি পেয়েছি অনিয়ম-ঊশৃংখল পুষে, হৃদয়-মস্তিষ্ক-দেহের খড়কুটো সব খাওয়ালাম; এক পেয়ালা দুধ দিলে না কখনো, দিলে না একটি বাছুর। জঙ ধরা অধাতুকে তাই অকেজো থেকে কেজোর দলে আসতে হলে কামারের ঘরে জ্বলেপুড়ে অবশেষে ফিরে আসতেই হয় ধাতবের মূলত্বে; জগতের প্রচলনে। প্রচলিত মনকে এখনো বুঝাই, ওরা কেউ হীনকে নিয়ে ভাবে না; হেন অকারণ কেনই বা করিস্ আত্মবিলীন? সে বলে, এই তো বেঁচে থাকার অবলম্বন- "ওরাও আমায় মনে করে, আমারে মনে পড়ে"; এ নির্যাস এখন প্রতিটি জীবিত দিনের প্রদীপে কেরোসিন।

তোকেও বলবো না- "মনে রাখিস্"; বলবো- ভাল থাকিস্।
তোরই-
"ফএমু"
২২.০১.২০০৭, মদীনা মুনওয়ারা, সৌদি আরব।

ছবির জন্য কৃতজ্ঞ যেখানে।

৭.
চোখের আলো নিভে গেলেও মনের আলো থাকে

প্রিয় প্রজন্ম,
ক'দিন থেকে একটা ভাবনা আমায় ক্রমাগত দোল খাইয়ে যাচ্ছে, আচ্ছা বল্তো, তোর ভাল থাকা কি আমি টের পাই, অথবা আমার ভাল থাকা তুই? মানুষের মন থেকে মনে মনে কি বিনা তারের কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা রেখেছেন সৃষ্টিকর্তা? এমনিতে তো মনকে বার্তা পাঠায় আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো, তারপর মন সে বার্তাকে পাঠিয়ে দেয় মস্তিষ্কের হেডকোয়ার্টারে এবং সেখান থেকে সিল-ছপ্পর এঁটে তা সিদ্ধান্ত হিসেবে বিতরিত হয় হাত-পা-মুখের মত যন্ত্রপাতিগুলোয়। কিন্তু আমি বলছিলাম মনবার্তা আর মনের কথা।

তার আগে আরেকটা ব্যাপার বলে নেই, ধর, তুই কোথাও বসে আছিস, আর এক জোড়া আকুল অথবা ব্যাকুল কিংবা গভীর চোখ তোকে দেখছে তো দেখছেই। কিন্তু সে দৃষ্টির তীব্রতায় তুই যেন আর টিকতে পারছিস্ না, তাই যেন হুট করেই ফিরে তাকালি সেই চোখ দু'টোর দিকে, আর দেখছিস সেই জোড়া ভ্রূ তোর দিকেই অধীর দৃষ্টি পাতিছে। কি, হয়নি কখনো এমনটি? চোখের আলো আছে কি নেই তা নিয়ে অতীত বিজ্ঞানীরা অনেক ঝগড়াবিবাদ শেষে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, আলো নেই; শুধু বস্তু আলোকিত হলে কিংবা বস্তুর আলোতেই চোখ দেখতে পায়। ওরা একে অপরের চুল-দাড়ী শতাব্দিব্যাপী ছিঁড়ছে ছিঁড়ুক, কিন্তু খেয়াল করেছিস্, হঠাৎ কখনো রাস্তার বাঁকে অথবা স্টেশনে অথবা চায়ের দোকানে অথবা তোদের পার্টিতে, হঠাৎই আধহালি নয়না তোকে দেখল, কি আশ্চর্য অমনি তুইও ফিরে তাকিয়ে পূর্ণ করে দিলি এক হালি, কি আশ্চর্য! কি আশ্চর্য! তাইতো আমি ভাবি এখনো, এই "ঝলকানি"টা তাহলে কি?

কি জানি, তোদের চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন কতদূর পেঁৗছেছে, ছড়া দু'টোর অাঁটি খুঁজে পেলে পোষ্ট করে পাঠিয়ে দিস্ কিন্তু।

কি নিয়ে যেন বকাবুলি করছিলাম? ওহ্ হাঁ, মনে মনে যদি এতদূর -এ জাতীয় কিছু, তাই না? এই শোন্ শোন্, আকাশে এখন অনেক তারা, আর আমি আমার অফিস কক্ষে একাকী, বৈদু্যতিক বাতির নিঝুম কনকনে আঁধারে দারুন শৈত্যাক্রান্ত, আর কিছু বলতে চাইছে না মন আমার এখন। দেখ, এখনো জানতে চাওয়াই হলো না- তুইও কি ভাল আছিস আমার মত, কষ্টের কাঁথা মুড়ি দিয়ে, নিরবে, বিজনে আর একরাশ বানানো বিরহে?

তোর-
'ফএমু'।

১৪.০১.২০০৭, মদীনা মুনওয়ারা, সৌদি আরব।

ছবির জন্য কৃতজ্ঞ যেখানে।

৮.
মোহময় জীবনের আহত দিনকাল

প্রিয় প্রজন্ম,
লিখিনি বহুদিন, সে এক নির্মম সত্য, সত্য নয় এ যে, ভুলে থেকেছি। আকাশ থেকে যদি বসন্তদিনে বৃষ্টি নামে আমরা কাজ ভুলে সীমের বিচিতে আনন্দ খুঁজে ফিরি। দায়িত্ববোধ তখন গৌণ হয়ে পড়ে কিছু সময়ের জন্য হলেও। তুই কি ছেলে বেলার কখনো বেলুন ফুলিয়েছিস? আমি ফুলিয়েছি, বহু কসরতের পর যখন মুখ থেকে বাতাসগুলোকে বেলুনে পাঠাতে পারতাম, তখন আনন্দে বেলুনের মত বুকের পরিধিটাও যেন ফুলতে শুরু করত। বেলুন ফুলছে, গর্বিত বুকটাও ফুলছে, ক্ষণিকের জন্য ভুলে যাই সীমানা, পরিধি, ধারণ ক্ষমতা; এবং বেলুন ফাটে, ফাটে বুকের দেয়াল, সে দেয়াল বেয়ে দৃষ্টি-পথে আষাঢ়ের আগেই নেমে আসে বর্ষা। আমায় ভিজিয়ে দেয়, নাইয়ে দেয়, মোহ থেকে পরিচ্ছন্ন করে তোলে।

"মোহ"! শব্দটাই যেন তুমুল নেশাখোর। কিন্তু এ ছাড়া জীবন পানিহীন মরুভূমি। নেশার নাম কি শুধু হেরোইন, মরফিন, প্যাথেডিন? অথবা পাতার বিড়ি, সিগারেট, দাঁতের নীচের গুল কিংবা জর্দাদেয়া পান? মন্দ-ভালোর দুনিয়াতে নেশা শব্দটিও কেবলি প্রান্তিক নয়; দু'প্রান্ত ও মধ্যপন্থা নিয়ে সেও জাগতিক নিয়মেরই ভাগীদার। যে ভাগীদার আমিও একজন, মোহরূপী নেশা নিয়ে। জীবনের নেশা, সত্যের মোহ, কর্মের মোহ, কিছু করে যাবো ক্ষুদ্র এ জীবনে-এ মোহ, কিছু যেন লুকিয়ে রয়েছে আমাতে –হয়ত এ ভ্রান্ত নেশা, ভালবাসতে চাওয়ার নেশা, কষ্টের ঘোরলাগা নেশা; কি নেই মাতাল জীবনে বল?

আজকাল সুরক্ষিত দুর্গের চেয়ে যুদ্ধক্ষেত্র অনেক প্রিয় মনে হয়, তুই কি জানিস কোন আঘাতে কষ্ট বেশী? সহযোদ্ধার না কি শত্রুর? আমি এখনো অংক কষছি মননের হিসাব যন্ত্রে। জীবনের অনেকটা পথ পেরিয়েছি, একটা সরল রেখায় পথচলা আজন্ম পছন্দ। বন্ধুরা বলতো: ভালো পথ দূর(আঁকাবাঁকা) ভালো। আর আমি বলতাম: সরল পথ বন্ধুরও ভালো। আমার সরলী ধারায় অন্য পথের ক্রস পয়েন্টে বরবারই আহত হয়ে এসেছি; নীতির এ বোকা (জগতের হিসেবে) পথে হয়ত আরো অনেক আহত সময় অপেক্ষমান আমার জন্য, অবশেষে নিহত শেষক্ষণও হয়তবা.....।

সময়টাকে স্পর্শ করতে চাই বারে বার, কিন্তু সে যেন আত্মার মতই অস্পৃর্শ।
ভালো থাকবি; আমার জন্য।

তোরই-

ফএমু

(মননের এ অর্থহীন প্রকাশ থেকে কেউ অর্থ খুঁজতে যাবেন না; নিরর্থক প্রমাণিত হয়ে যেতে পারেন।)

০৫.০৪.২০০৮, মদীনা মুনাওয়ারা, সউদী আরব।

ছবির জন্য কৃতজ্ঞ যেখানে।


৯.

 
  Today, there have been 1 visitors (2 hits) on this page!  
 
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free